ভিন রাজ্যে কর্মরত পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের সম্মান ও সুরক্ষা দিতে রাজ্য সরকার এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে চালু হলো “শ্রমশ্রী প্রকল্প”। এই প্রকল্পের মাধ্যমে যে সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিক বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে রাজ্যে ফিরে আসছেন, তাঁদের মাসে ৫০০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, তাঁদের পরিবারকে দেওয়া হবে সার্বিক সামাজিক সুরক্ষা।
আপনি যদি একজন পরিযায়ী শ্রমিক হন বা আপনার পরিচিত কোনো পরিযায়ী শ্রমিক এই পরিস্থিতিতে থাকেন, তবে এই প্রতিবেদনটি আপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আমরা শ্রমশ্রী প্রকল্পের খুঁটিনাটি, সুবিধা, যোগ্যতা এবং আবেদন পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
শ্রমশ্রী প্রকল্প এক নজরে (Shramashree Scheme Overview)
** প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য (Objectives of the Scheme)**
- তৎক্ষণিক আর্থিক সুরাহা: ভিন রাজ্য থেকে কাজ হারিয়ে রাজ্যে ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের হাতে নগদ টাকা তুলে দিয়ে তাঁদের প্রাথমিক চাহিদা মেটানো।
- সামাজিক সুরক্ষা: পরিযায়ী শ্রমিক এবং তাঁর পরিবারকে স্বাস্থ্য, খাদ্য ও শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকারগুলি সুনিশ্চিত করা।
- স্থানীয় কর্মসংস্থান: শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে রাজ্যের মধ্যেই তাঁদের জন্য উপযুক্ত কাজের সুযোগ তৈরি করা।
- তথ্যভান্ডার তৈরি: রাজ্যের সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিকের একটি নথিভুক্ত তালিকা (Database) তৈরি করা, যাতে ভবিষ্যতে যেকোনো প্রয়োজনে দ্রুত তাঁদের কাছে পৌঁছানো যায়।
শ্রমশ্রী প্রকল্পে কী কী সুবিধা পাওয়া যাবে? (List of Benefits)
এই প্রকল্পে শুধুমাত্র মাসিক ভাতা নয়, একটি সম্পূর্ণ সুরক্ষা প্যাকেজ রয়েছে:
- মাসিক আর্থিক সহায়তা: যোগ্য পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রতি মাসে ₹৫,০০০ টাকা করে সরাসরি তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হবে।
- এককালীন অনুদান: ভিন রাজ্য থেকে ফিরে আসার যাতায়াত খরচ বাবদ এককালীন ₹৫,০০০ টাকা দেওয়ার সংস্থানও রাখা হয়েছে।
- বিনামূল্যে রেশন: উপভোক্তার পরিবারকে ‘খাদ্য সাথী’ প্রকল্পের অধীনে বিনামূল্যে রেশন দেওয়া হবে।
- বিনামূল্যে চিকিৎসা: ‘স্বাস্থ্য সাথী’ কার্ডের মাধ্যমে পরিবারের সকল সদস্যের জন্য বছরে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসার সুবিধা পাওয়া যাবে।
- দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ: ‘উৎকর্ষ বাংলা’ পোর্টালের মাধ্যমে পরিযায়ী শ্রমিকদের যোগ্যতা ও আগ্রহ অনুযায়ী বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
- নিশ্চিত কর্মসংস্থান: প্রশিক্ষণ শেষে ‘কর্মশ্রী’ প্রকল্পের মাধ্যমে ১০০ দিনের কাজের মতো বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে কাজের সুযোগ করে দেওয়া হবে।
- সন্তানদের শিক্ষা: পরিযায়ী শ্রমিকের সন্তানদের রাজ্যের স্কুলগুলিতে বিনামূল্যে ভর্তি এবং পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হবে।
কারা আবেদন করার যোগ্য? (Eligibility Criteria)
আবেদন করার জন্য নিম্নলিখিত শর্তগুলি পূরণ করতে হবে:
- আবেদনকারীকে অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
- আবেদনকারীকে ভিন রাজ্যে কর্মরত একজন পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে শ্রম দপ্তরের পোর্টালে নথিভুক্ত থাকতে হবে।
- যাঁরা সম্প্রতি কাজ হারিয়ে রাজ্যে ফিরে এসেছেন বা ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন, তাঁরা অগ্রাধিকার পাবেন।
- আবেদনকারীর নিজস্ব আধার কার্ড এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকা বাধ্যতামূলক।
আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় নথি (Documents Required)
আবেদন করার সময় নিম্নলিখিত নথিগুলির প্রয়োজন হবে:
- পরিচয়পত্র: আধার কার্ড (বাধ্যতামূলক), ভোটার কার্ড।
- বাসস্থানের প্রমাণ: রেশন কার্ড বা স্থায়ী ঠিকানার অন্য কোনো সরকারি প্রমাণপত্র।
- ব্যাঙ্কের বিবরণ: আবেদনকারীর নামে থাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের পাসবুকের প্রথম পাতার জেরক্স।
- ছবি: সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি।
- মোবাইল নম্বর: চালু থাকা একটি মোবাইল নম্বর।
- পরিযায়ী শ্রমিকের প্রমাণ: আপনি যে একজন পরিযায়ী শ্রমিক, তার কোনো প্রমাণ (যেমন – শ্রম দপ্তরের পোর্টালে রেজিস্ট্রেশনের প্রমাণ)।
কীভাবে আবেদন করবেন? (Step-by-Step Application Process)
শ্রমশ্রী প্রকল্পের আবেদন প্রক্রিয়া অনলাইন এবং অফলাইন উভয় মাধ্যমেই করা যাবে। সরকার খুব শীঘ্রই এর জন্য একটি নতুন পোর্টাল চালু করবে।
অনলাইন আবেদন পদ্ধতি (Online Application)
- পোর্টাল ভিজিট: প্রথমে পশ্চিমবঙ্গ শ্রম দপ্তরের অফিসিয়াল ‘শ্রমশ্রী’ পোর্টালে যেতে হবে (লিঙ্ক চালু হলে এখানে দেওয়া হবে)।
- রেজিস্ট্রেশন: “New Registration” লিঙ্কে ক্লিক করতে হবে।
- ফর্ম পূরণ: মোবাইল নম্বর ও OTP দিয়ে ভেরিফাই করার পর আবেদনপত্রটি খুলবে। সেখানে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে নিজের সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।
- নথি আপলোড: প্রয়োজনীয় নথিগুলির স্ক্যান কপি আপলোড করতে হবে।
- সাবমিট: সব তথ্য যাচাই করে “Submit” বাটনে ক্লিক করতে হবে এবং অ্যাপ্লিকেশন নম্বরটি ভবিষ্যতের জন্য সেভ করে রাখতে হবে।
অফলাইন আবেদন পদ্ধতি (Offline Application)
রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ও ব্লকে “দুয়ারে সরকার” ক্যাম্পের মতো বিশেষ শিবির আয়োজন করা হতে পারে। সেখানে গিয়ে নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করে প্রয়োজনীয় নথিপত্র সহ জমা দিলেই আবেদন করা যাবে।