পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার শিল্পীদের আর্থিক উন্নতি এবং তাদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে একাধিক স্কিম চালু করেছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো পশ্চিমবঙ্গ শিল্পী আর্থিক সুবিধা স্কিম, যা বিশেষভাবে শিল্প সমবায় সমাজগুলির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এই স্কিমের মাধ্যমে শিল্পীরা তাদের শিল্পকর্মের উন্নতি করতে পারবেন, এবং তারা যাতে নিজের জীবিকা নির্বাহ করতে সক্ষম হন, তার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।
১. প্রধান উদ্দেশ্য:
পশ্চিমবঙ্গ শিল্পী আর্থিক সুবিধা স্কিম এর মূল উদ্দেশ্য হলো শিল্পীদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদের আর্থিক অবস্থা উন্নত করা। শিল্প সমবায় সমাজগুলিকে সরকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করে যাতে তারা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারে, পণ্যের মান বৃদ্ধি করতে পারে এবং বৃহত্তর বাজারে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়।
২. স্কিমের আওতা:
এই স্কিমের আওতায় রাজ্যের শিল্প সমবায় সমাজগুলো, যেগুলি স্থানীয় হস্তশিল্প, কাঠের কাজ, পাথরের কাজ, সুতির কাজ এবং অন্যান্য নানা ধরনের শিল্পকর্ম উৎপাদন করে, তারা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারে।
৩. অনুদানের পরিমাণ:
পশ্চিমবঙ্গ শিল্পী আর্থিক সুবিধা স্কিম এর অধীনে শিল্প সমবায় সমাজগুলিকে যে অনুদান প্রদান করা হবে তা নির্ভর করবে তাদের প্রস্তাবিত প্রকল্পের ওপর। সাধারণত, এই অনুদানটি তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়:
প্রকল্পের ধরন | অনুদানের পরিমাণ | শর্তাবলী |
যন্ত্রপাতি কেনা | ₹৫ লাখ – ₹১৫ লাখ | প্রযুক্তির উন্নতি ও আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনার জন্য |
উৎপাদন বৃদ্ধি | ₹১০ লাখ – ₹২৫ লাখ | নতুন উৎপাদন শাখা খোলার জন্য বা পুরনো শাখা সম্প্রসারণের জন্য |
বিপণন ও বিপণন কার্যক্রম | ₹৫ লাখ – ₹১০ লাখ | বাজার সম্প্রসারণ এবং বিপণন কৌশল ব্যবহারের জন্য |
৪. যোগ্যতা:
এই স্কিমের আওতায় অনুদান পেতে, শিল্প সমবায় সমাজগুলিকে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। সেগুলি হলো:
- সমবায় সমাজটি পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্গত হতে হবে।
- সমাজের সদস্যদের ৫০% শিল্পী হতে হবে এবং তাদের শ্রমসাধ্য বা হস্তশিল্প সম্পর্কিত কাজের সাথে যুক্ত থাকতে হবে।
- সমাজটি কমপক্ষে ৫ বছরের পুরনো হতে হবে এবং সঠিকভাবে নিবন্ধিত হতে হবে।
- সমাজের দ্বারা প্রস্তাবিত প্রকল্পের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা এবং কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হবে।
৫. আবেদন প্রক্রিয়া:
যে শিল্প সমবায় সমাজগুলি এই অনুদান প্রাপ্তির জন্য আবেদন করতে চায়, তাদেরকে কিছু নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে:
- আবেদনপত্র সংগ্রহ: আবেদনপত্র এবং প্রয়োজনীয় ফর্মগুলি জেলা শিল্প বিভাগ অথবা জেলা সমবায় অফিস থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
- প্রয়োজনীয় দলিলপত্র: আবেদনকারীদের তাদের সমবায় সমাজের রেজিস্ট্রেশন শংসাপত্র, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য, সমবায়ের সদস্যদের তালিকা এবং প্রকল্প প্রস্তাবনা জমা দিতে হবে।
- আবেদন জমা দেওয়া: সম্পূর্ণ আবেদন ফরম এবং দলিলপত্র জেলা শিল্প বা সমবায় অফিসে জমা দিতে হবে।
- প্রকল্প মূল্যায়ন: জমা দেওয়া প্রকল্পটি মূল্যায়ন করার পর, যদি তা গ্রহণযোগ্য হয়, তাহলে অনুদান দেওয়া হবে।
৬. অনুদানের ব্যবহারের উদ্দেশ্য:
এই স্কিমের আওতায় দেওয়া অনুদানটি বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে:
- প্রযুক্তি উন্নয়ন: আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনার জন্য, যাতে উৎপাদন বাড়ানো যায়।
- উৎপাদন উন্নয়ন: নতুন উৎপাদন শাখা খোলার জন্য অথবা পুরনো শাখাগুলিকে সম্প্রসারণের জন্য।
- বাজার সম্প্রসারণ: শিল্প পণ্যের বাজার বৃদ্ধি করতে এবং নতুন বিপণন কৌশল প্রয়োগ করতে।
৭. অর্থনৈতিক সহায়তা ও এর গুরুত্ব:
এই স্কিমের মাধ্যমে শিল্প সমবায় সমাজগুলি যাতে আরও বেশি উৎপাদন করতে পারে এবং সৃজনশীল শিল্পীদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হয়, তার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। এর ফলে:
- শিল্পীদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হবে।
- সমবায় সমাজগুলির অর্থনৈতিক বৃদ্ধি হবে।
- স্থানীয় শিল্পের মান বৃদ্ধি পাবে এবং তাদের বাজার সম্প্রসারিত হবে।
৮. সফল প্রকল্পের উদাহরণ:
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে এই স্কিমের আওতায় বহু শিল্প সমবায় সমাজ সাফল্যের সঙ্গে কাজ শুরু করেছে। যেমন, বীরভূম জেলার তাঁত শিল্পী সমবায় সমাজ, যেখানে সরকারের সহায়তায় তাঁত শিল্পের উন্নতি হয়েছে এবং নতুন বাজার সৃষ্টি হয়েছে। তারা আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে এবং নতুন পণ্য বাজারে নিয়ে এসেছে।
৯. সমাপ্তি:
পশ্চিমবঙ্গ শিল্পী আর্থিক সুবিধা স্কিম শিল্প সমবায় সমাজগুলিকে সহায়তা প্রদান করে তাদের শিল্পকর্মের উন্নতি, উৎপাদন বৃদ্ধি এবং আর্থিক স্বাবলম্বিতা অর্জনের একটি মহান সুযোগ তৈরি করছে। এটি শুধু শিল্পীদের জন্য নয়, রাজ্যের অর্থনীতির জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।